July 13, 2025, 2:14 pm
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পথগুলি দিয়ে ব্যাপকভাবে পাচার হয়ে আসছে হেরোইন, ফেনসিডিল, দামীমদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক। কোনভাবেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না। আন্তজাতিক মাদক চোরাকারবারের গডফাদার, মাদকসম্রাট, নারী মাদক চোরাকারবারি গ্রেফতার হলেও মাদকের বিস্তার বন্ধ হচ্ছে না।
এবছর ২২ এপ্রিল কামলা থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া কুখ্যাত মাদকের ডিলার মাদকব্যবসায়ী তারেককে সাড়ে ৬ কেজি হেরোইন নগদ ১৩ লাখ টাকাসহ গ্রেফতারের পর থেকে কিছু দিন মাদক ব্যবসায়ী পালিয়ে গিয়েছিল। তারা কিছুদিন আত্নগোপনে থেকে মাদক কারবার পরিচালনা করলেও এখন তারা প্রকাশ্যে বীরদাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরিচালনা করছেন মাদক সিন্ডিকেট।
এছাড়া উপজেলার দিয়াড়মানিকচক গ্রামের মোঃ নাজিমুল হোসেন (৩৭), কে ৫০ লাখ টাকার ৫০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করেছে গোদাগাড়ী মডেল থানার পুলিশ। তার পিতার নাম মোঃ আতাউর রহমান।
১৫ মার্চ গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গোদাগাড়ী মডেল থানার পুলিশ ৫ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মোসাঃ নাজমা (৫৩) ও মোসাঃ তাহমিনা বেগম মিনু (৫৫) কে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। মোসাঃ নাজমা রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার সুলতানগঞ্জ গাঙ্গোবাড়ি গ্রামের মোঃ আবুল কাশেমের স্ত্রী এবং মোসাঃ তাহমিনা বেগম মিনু মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার পৃথিমপাশা গ্রামের মৃত আলমের স্ত্রী। উদ্ধারকৃত হেরোইনের মূল্য ৫ কোটি টাকা।
২০২৪ ইং সনের ২৭ জানুয়ারি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার পৌর এলাকার মাদারপুর এলাকার একটি খামারবাড়িতে বাজারের ব্যাগ থেকে ৮ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করে গোদাগাড়ী থানা মডেল থানার পুলিশ। ফরিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির খামারবাড়ি থেকে জব্দ করা ওই হেরোইনের আনুমানিক মূল্য আট কোটি ৪০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছিল পুলিশ। এই ফরিদুল এখনো ধোরা-ছোঁয়ার বাইরে। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলাও করেনি পুলিশ। একাধিক সূত্র জানায়, এই ফরিদুল ইসলাম এখনো আড়ালে থেকে হেরোইনের বড় বড় চালান নিয়ন্ত্রণ করেন।
২০২৩ সালের ১২ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ৬ কেজি ৭০০ গ্রাম হেরোইনসহ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আশিককে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
“মাদক নির্মূল শুধু প্রশাসনের কাজ নয়—এটি সামাজিক আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন। তাই জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সচেতনতা জরুর।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার জামাদানী, হাটগোবিন্দপুর, রামনগর এলাকায় মাদক বিরোধী টাস্ক ফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ সার্বিক সহযৌগিতায়
১ কেজি গাঁজা জব্দ ও সেবনের উদ্দেশ্য রাখা গাজা ধ্বংস সহ প্রায় ২০০০ (দুই হাজার) লিটার চোলাই মদ জব্দ ও ধ্বংস করা হয়েছে।
গাঁজা ব্যবসায়ী ও চোলাই মদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এসময় মাদক সংরক্ষণ ও সেবনের দায়ে নিন্মোক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রয় আইন ২০১৮ সালের ৯(১) এর গ ধারা লংঘনের অপরাধে উক্ত আইনে ৩৬ (১) এর ২১ ধারা অনুসারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ।
মোঃ শরিফুল ইসলাম (৩৩), পিতা-মোঃ বাবলু হোসেন, সাং- জামাদানী, গোদাগাড়ী, রাজশাহীকে ০২ (দুই) বছর বিনাশ্রশ কারাদন্ড ও ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হয়েছে। অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো অতিরিক্ত ০১ (এক) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
মোঃ একরামুল হক (৫৮) পিতা-মৃত জমসেদ আলী, সাং- রামনগর, গোদাগাড়ী, রাজশাহীকে ০২ (দুই) বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হয়েছে। অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো অতিরিক্ত ০১ (এক) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
মোঃ হান্নান আলী (৪০), পিতা-মোঃ নজরুল ইসলাম, সাং-হাটগোবিন্দপুর, গোদাগাড়ী, রাজশাহীকে ০২ (দুই) বছর বিনাশ্রশ কারাদন্ড ও ৮০০/- (আটশত) টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হয়েছে। অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো অতিরিক্ত ০১ (এক) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
মোঃ রুবেল (৩৫), পিতা-মোঃ হাসেন, সাং-হাটগোবিন্দপুর, গোদাগাড়ী, রাজশাহীকে ০২ (দুই) বছর বিনাশ্রশ কারাদন্ড ও ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হয়েছে। অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো অতিরিক্ত ০১ (এক) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ বলেন, “মাদক সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই মাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযান কঠোরভাবে অব্যাহত থাকবে।” “প্রশাসনের কাজ শুধু আইন প্রয়োগ নয়, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাও একটি বড় দায়িত্ব। গোদাগাড়ীতে মাদকের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে কাউকে ফিরিয়ে আনা গেলে সেটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।” আগামীতে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনসহ এধরনের কাজ অব্যাহত থাকবে ইনসাল্লাহ।
গোদাগাড়ী মডেল থানা ওসি মোহম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা যতই শক্তিশালী হউন না কেন তাদেরকে কোনভাবে ছাড় দেয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহতভাবে চলবে। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মুল করা সম্ভাব নয়। মাদক ব্যবসায়ীদর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করে তুলতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে তা হলেই মাদক কমে আসবে।
মোঃ হায়দার আলী
গোদাগাড়ী,
রাজশাহী।